সময়টা ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ব্রাজিলের বোয়া ভিস্তা শহরের একটি বারে গিভাল্ডো হোসে ভিসেন্টে দে দেউস তার বন্ধু রাইমুন্ডো আলভেস গোমেসের সঙ্গে পুল খেলছিলেন। এসময় গিভাল্ডো ১৫০ ব্রাজিলিয়ান রিয়াল হেরে যান। এরপর এই টাকা আর তিনি শোধ করতে পারছিলেন না। এই নিয়ে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা।এক পর্যায়ে আলভেস বার থেকে বেরিয়ে যান এবং একটু পরই একটি বন্দুক হাতে নিয়ে ফিরে আসেন। সেই বন্দুক দিয়েই তিনি গিভোল্ডকে গুলি করেন এবং সেখানেই গিভোল্ড মারা যান। এরপর পালিয়ে যান আলভেস। পুলিশ তাকে খুঁজলেও আর পাননি।গিভোল্ড যখন মারা যান তখন তার বড় মেয়ে গিসলেন সিলভা দে দেউসের বয়স মাত্র ৯ বছর। তার আরও চার ভাইবোন ছিল। গিভোল্ডের স্ত্রী পাঁচ সন্তান নিয়ে বিপদে পড়েন। সংসার চালাতে বড় মেয়ে গিসলেন নানান কাজে মাকে সাহায্য করতেন। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়েননি তিনি।
গিসলেনের বাবা তাকে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় উৎসাহিত করতেন। তাই তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান। এদিকে বাবার হত্যাকারীকে একদিন না একদিন ধরবেনই এমন শপথও নিয়েছিলেন মনে মনে। গিসলেন ১৮ বছর বয়সে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর আইন স্কুলে ভর্তি হোন। সাত বছর পরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আইনজীবী হন।
তবে ২০২২ সালে, তিনি আইন পেশা ছেড়ে দেন পুলিশ অফিসার পদে যোগ দিতে। দুই বছর পর এ বছরের ১৯ জুলাই তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি অবিলম্বে হোমিসাইড ডিভিশনে একটি অবস্থানের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, যা তাকে রাইমুন্ডো আলভেস গোমেসকে অনুসরণ করার সুযোগ দিয়েছে।২০১৩ সালে গিভাল্ডো হোসে ভিসেন্টে দে দেউসকে হত্যার জন্য গোমেসকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু অপরাধের পরে তাকে কখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি, তাই শাস্তিটি কখনই কার্যকর করা হয়নি। তার আইনজীবীরা ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন, কিন্তু উভয় আপিলই হাইকোর্ট অব জাস্টিস দ্বারা প্রত্যাখ্যান করেছিল।গোমেজের জন্য সবশেষ ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর, একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে তার কর্মজীবনের মাত্র দুই মাস পর গিসলেন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর তার বাবার হত্যাকারীকে বিচারের আওতায় আনার স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি। তিনি এবং তার দল গোমেজকে বোয়া ভিস্তার কাছে নোভা সিডেড অঞ্চলের একটি খামারে লুকিয়ে থাকতে দেখে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে।
বাবার খুনিকে গ্রেপ্তারের পর গিসলেন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার মনে হয়েছিল তার এবং তার পরিবারের ২৫ বছরের অপেক্ষা শেষ হয়েছে, তার মনে হয়েছে তার কাঁধ থেকে অনেক বড় একটি ভার সরে গিয়েছে। গিসলেন ও তার পরিবার খুবই খুশি এখন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গিসলেন ও তার পরিবারকে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন।